বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বাইনচটকী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন আওয়মীলীগের নেতাদের ছত্রছায়ায় নেতাদের ম্যানেজ করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বেতন আদায়, মাঠ ভড়াটের টাকা আত্নসাৎ, শিক্ষকদের বেতন তুলতে টাকা আদায় এবং নিয়োগ বাণিজ্যসহ ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে উঠেছে। অতিরিক্ত বেতন তোলার বিষয়টি শিক্ষার্থীরা জানতে পেরে এর বিচার দাবিতে ক্লাস ছেড়ে সড়কে অবস্থান আস্থান করেছেন তারা। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস করবেন বলেও জানান শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে সব ঠিক করে ফেলবেন বলেও জানান তিনি। যার ভিডিও চিত্র প্রতিবেদকে কাছে আছে।
সরেজমিনের গিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরিক্ষার নামে অতিরিক্ত ফি আদায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সময় মোটা অংকের টাকার বাণিজ্য, শিক্ষকদের বেতনের টাকা তোলার সময়টাকা আদায়, মাঠের বালু ভরাটের নামে টাকা আত্মসাৎসহ অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি অভিযোগ করেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি। তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে না এসে নিজের খেয়াল-খুশি মতো চলতো। তার অনিয়মের বিষয়ে কথা বললে স্থানীয় আওয়ামীলীগের সভাপতি ও একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে দিয়ে শিক্ষকদের ভয়ভিতী দেখিয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতো। শিক্ষার্থীরা অতিরিক্তি বেতনের বিষয়ে কথা বলতে গেলে মারধর করে টিসি দিয়ে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়।
বাইনচটকি মাধ্যমিক বিদ্যালরে দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী মো. সাব্বির ও নবম শ্রেনীর শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, গত ১মাস ধরে প্রধান শিক্ষক ক্লাসে আসেনি। এখন এসেই সামনে আমাদের পরীক্ষার ফি ১ হাজার টাকা চেয়েছে। আমরা কম দেয়ার কথা এবং অন্য বিদ্যালয়ে কম নেয় এমন কথা বললেই সে হুমকি ধামকি এমনকি এ ব্যাপারে কোন কথা বললে টিসি দিয়ে বের করে দিবেন বলে জানান। আমরা মাঠে খেলাধুলা করতে পারি না, সুনেছি কয়েক বছর আগেই মাঠে বালু ভড়াট দেয়ার টাকা খেয়ে ফেলেছে। এরকম শিক্ষক চলে না যাওয়া পর্যন্ত ক্লাস করবেন না বলে জানান তারা।
ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফিরোজা আক্তার, রুনা আক্তারসহ আরো অনেকে জানান, পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক জাবির হোসেন ও কাকচিড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বিদ্যালয়ের সভাপতি আলাউদ্দিন পল্টুর ছত্রছায়ায় থেকে গত ৬ বছর ধরে যে পরিমান শিক্ষকদের অত্যাচার করেছে তা আমরা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। তার আতœসাৎ করা টাকার সকল ভাগ জাবির হোসেন ও আলাউদ্দিন পল্টুকে দিতো। আমি (রুনা আক্তার) প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে টাকা না দেয়ায় ৩ বছর ধরে বেতন বন্ধ করে রেখেছে। প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে টাকা না দেয়ায় গাইবান্ধ জেলার গবিন্ধগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় ৬টি মামলার আসামী করেছেন তিনি। তার মতো কুলাঙ্গার ও আওয়ামীলীগের অত্যাচারী শিক্ষক আমাদের প্রয়োজন নেই। তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা উচিৎ।
বাইনচটকি মাধ্যমিক বিদ্যালরে জমি দাতা ও সাবেক সভাপতি সামছুল আলম জানান, আওয়ামীলীগের ছত্রছায়ায় আনোয়ার হোসেন নিজের ইচ্ছেমতো বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। আমরা প্রতিবাদ করলেই আওয়ামীলীগের লোক দিয়ে হুমকি দিতো। শিক্ষদের এলাকা ছাড়া করতো। কোন অবিভাবক কথা বললে তার ইজ্জত নিয়ে যেতে পরেনি। এর একটা বিহীত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে বাইনচটকি মাদ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের সাথে কথা বলতে তার বিদ্যালয়ে গেলে তিনি সাংবাদিকদের দেখে ক্যামেরা বন্ধ করতে বলেন এবং কোন সাক্ষাতকার দিবেন না বলে জানান। বিষয়টি নিয়ে রাতে সাংবাদিকদের সাথে সমাধান করবেন বলেও জানান তিনি।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, আমি বিভিন্ন মাধ্যমে অনিয়মের বিষয়ে জেনেছি, সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।