গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় নিম্নচাপে কারনে অনেক জেলে উপকূলে ফিরেছে। সাগর স্বাভাবিক হওয়ার পর পুনরায় মাছ শিকারের জন্য প্রস্তুতি নিলে বাঁধ সাজে বরফ সংকট। গত চারদিন ধরে বরগুনার পাথরঘাটায় বিদ্যুৎ না থাকায় বরফ উৎপাদন না হওয়ায় সাগরে যেতে পারছে না জেলেরা। অনেক ট্রলারে বাজার সদায় করলেও এখন বরফের কারনে সাগরে যেতে পারছে না, ফলে ট্রলারেই বাজার সদায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ কারনে জেলেদের মনে দুশ্চিন্তা আরও বাড়ছে।
এদিকে বরফ সংকট হওয়ায় খুলনা, পিরোজপুরের পাড়েরহাটসহ কয়েক জায়গা থেকে বরফ কিনে আনছেন জেলেরা। এ জন্য বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে জেলেদের।
বিষখালী নদীর পাড়ের জেলে মনির হোসেন, আফজাল, ছাব্বির মিয়াসহ আরো অনেকে বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর থেকে নিম্নচাপ লেগেই রয়েছে। এবার ৪ থেকে ৫ দিন ধরে প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি থাকায় বিদ্যুৎ চলে যায় যা আজ সোমবারেও আসে নাই। সাগরে প্রচুর ইলিশ রয়েছে। নিম্নচাপের মধ্যে যারা অল্প সময়ের জন্যেও যারা মাছ শিকার কর ফিরে এসেছে তারা অনেক মাছ পেয়েছে। কিন্তু জেলেরা মাছ নিয়ে ঘাটে এসে বরফ পাচ্ছেন না। এতে নস্ট হয়ে যাচ্ছে তাদের শিকার করা মাছ। তাছাড়া যারা নিম্নচাপের পরে আজ সোমবার সাগরে মাছ শিকারে যাবে তারাও বরফ পাচ্ছেন না। ৬৫ দিনের নিশেধাজ্ঞার পরে একের পর এক বিপদ লেগেই আছে। বরফ তৈরি হতে প্রায় ২৪ ঘন্টা সময় লেগে যায়। কখন বিদ্যুৎ আসবে আর কখন বরফ তৈরি হবে তা আল্লাহই ভালো যানে। বিদ্যুৎ বিভাগকে যতোবার ফোন দিয়েছি কখনো তাদের ফোন খোলা পাইনি। একটি নাম্বার পাবলিকের জন্য রেখেছে তাও সব সময় বন্দ করে রাখে। বুজতে পারছিনা তাদের কিসে এতো সমস্যা। দেশের অন্য কোথাওতো বিদ্যুতে সমস্যা হচ্ছে না, তাহলে আমাদের পাথরঘাটায় কিসের সমস্যা। জেলেদের সব কিছুতেই সমস্যা হচ্ছে। জেলেদের দিকে সরকারের নজর দেয়া উচিৎ।
পল্লীবিদ্যুতের পাথরঘাটা ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. আব্দুস ছালাম জানান, আমাদের এলাকায় সব চেয়ে বেশী সমস্যা হয় মঠবাড়িয়া থেকে। পিরোজপুর থেকে মঠবাড়িয়া হয়ে ৩৩ কেভি ভোল্টেজের বিদ্যুতের লাইন পাথরঘাটায় এসেছে। সেই লাইনে ফল্ট হলে আমাদের এখানে সমস্যা দেখা দেয়। মঠবাড়িয়া লাইন ঠিক হলেই আমাদের এখান থেকে বিদ্যুৎ চালু হবে। তিনি আরো জানান, পাথরঘাটায় একটি মৎস্য ঘাট রয়েছে যেখানে সব সময় বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়, যদি পাথরঘাটায় বিদ্যুতের সাব-স্টেশন হয় তবে বিদ্যুতের সমস্যা কমে যাবে বলেও জানান তিনি।
পাথরঘাটার এফবি মায়ের দোয়া বরফ কলের ম্যানেজার মো. ইব্রাহিম মিয়া জানান, সাগরে নিম্নচাপের কারনে মাছ শিকারে ট্রলার যেতে পারে নাই এবং অতি বৃষ্টির কারনে গত ৪ দিন ধরে পাথরঘাটায় বিদ্যুৎ নেই। সেই থেকেই বরফ উৎপাদন বন্দ রয়েছে। বিদ্যুৎ আসালেও বরফ তৈরি হতে ২৪ থেকে ৩০ ঘন্টা সময় লাগবে। আমাদের যা বরফ ছিলো গতকাল শেষ হয়ে গেছে। আজ কোন বৃষ্টি নেই, আজও বিদ্যুৎ আসে নাই। পাথরঘাটার মানুষের সাথে বিদ্যুৎ বিভাগ লুকোচুরি খেলছে। দেশের বৃহত্তম মৎস্য বন্দরে যদি বিদ্যুৎ নিয়ে এরকম করে তবে বিদ্যুৎ দিয়ে কি হবে? আমরা এর প্রতিকার চাই!
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ৫ দিন শেষে আজ নিম্নচাপ শেষ হয়েছে। আজ থেকেই জেলেরা ট্রলার নিয়ে সাগরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ উপজেলায় বিদ্যুৎ না থাকায় বরফ তৈরি করতে পারছেনা বরফ কলের মালিকরা। জেলেদের মধ্যে বরফের জন্য হাহাকার শুরু হয়ে গেছে। বরফ হতে আরও ২৪ থেকে ৩০ ঘন্টা সময় লাগবে। তারপর বরফ নিয়ে সাগরে রওনা করবে জেলেরা। পাথরঘাটায় বিদ্যুৎ বিভাগ যে পরিমান সমস্যা করে এটা নজীর বিহীন। সরকারের যে পরিমান রাজস্ব আসে তাতে সবার আগে পাথরঘাটায় বিদ্যুৎ থাকা উচিত ছিলো। বিদ্যুতের এ ভেল্কিবাজি থেকে এ অঞ্চলের মানুষ ও জেলেরা পরিত্রান চায়।